ঘরেই ৭ টি প্রাথমিক চিকিৎসা ও পনিতে ডুবে গেলে করণীয়





পুড়ে গেলে চিকিৎসার সবচেয়ে ভালো উপায় কী? অথবা হাত কেটে গেলে কী করতে পারেন? বিশেষজ্ঞরা বলেন, হাসপাতালে যাওয়ার আগে জরুরি অবস্থায় ঘরেই কিছু প্রাথমিক চিকিৎসা করা জরুরি। ঘরেই প্রাথমিক চিকিৎসা সেরে নিলে অনেক জটিল পরিস্থিতি এড়ানো যায়।
ঘরে বসে কিছু আঘাতের প্রাথমিক চিকিৎসার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথ ডটকম।

১. হোঁচট খেলে বা গোড়ালি মচকালে :

প্রথম তিন দিন একটি কমপ্রেশন ব্যান্ডেজ লাগিয়ে রাখতে পারেন। দিনের কয়েক ঘণ্টা পা উঁচু করে রাখুন। ২০ থেকে ৪০ মিনিট আহত স্থানে বরফ লাগান।
খেয়াল রাখবেন
এ রকম অবস্থায় বিশ্রামই একমাত্র ওষুধ। তাই বিশ্রাম নিন। পায়ে কোনো ধরনের চাপ দেবেন না। চাপ দিলে পায়ের লিগামেন্ট পুনরায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন :
পা ফুলে গেলে অথবা লাল হয়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

২. মাথায় বরফ বা ঠান্ডা পানি কখন দেবেন :

মাথা ব্যথা, চোখে ঝাপসা লাগা, বিরক্তি ভাব, তন্দ্রা ভাব, আলো অথবা শব্দ সহ্য করতে না পারা—এ ধরনের সমস্যা হলে মাথায় বরফ বা ঠান্ডা পানি ব্যবহার করতে পারেন।
খেয়াল রাখবেন
মাথায় ঠান্ডা পানি ঢাললে আরাম লাগলেও সেটি দীর্ঘক্ষণ করবেন না। বেশি সময় ঠান্ডার সংস্পর্শে থাকলে সর্দি-জ্বরের সমস্যা হতে পারে।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন :
এসব লক্ষণের সঙ্গে যদি বমি থাকে, কাজ করতে বেশি তন্দ্রা ভাব অনুভূত হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

৩. হাত কেটে গেলে :

হাত কেটে গেলে ৫ থেকে ১০ মিনিট পরিষ্কার তোয়ালে বা কাপড় দিয়ে কাটা স্থান চেপে ধরুন। রক্ত পড়া বন্ধ হলে পানি ঢালুন। অ্যান্টিবায়োটিক ওয়েনমেন্ট বা ক্রিম লাগান এবং ব্যান্ডেজ করুন।
খেয়াল রাখবেন
রক্ত পড়ছে কি না, এটি বারবার খুলে দেখবেন না। পাঁচ মিনিট হয়ে গেলে একবার দেখে আবার চেপে ধরুন।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন :
যদি রক্ত পড়া বন্ধ না হয় এবং কাটা যদি এক থেকে দুই ইঞ্চির বেশি হয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান।

৪. পুড়ে গেলে :

পোড়া স্থান ট্যাপের নিচে রেখে পানি ছেড়ে দিন। এর পর অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম ব্যবহার করুন এবং হালকা করে ব্যান্ডেজ করুন।
খেয়াল রাখুন
কখনই পোড়া স্থানে বরফ দেবেন না। এ ক্ষেত্রে বরফ নিরাময়ের গতিকে ধীর করে তোলে।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন :
যদি দুই সেন্টিমিটারের ওপরে পুড়ে যায়, সঙ্গে সঙ্গে ফোসকা পড়ে, তবে চিকিৎসকের কাছে যাবেন দ্রুত।

৫. গরমে ক্লান্ত বোধ করলে :

যদি মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব হয়, তবে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করুন। গোসল শেষে ফ্যানের নিচে বা ঠান্ডা জায়গায় বসুন।
খেয়াল রাখবেন
অতি গরমে হিট স্ট্রোকের মতো সমস্যা হতে পারে, যা জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দিতে পারে।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন :
যদি মাথা ঘুরে পড়ে যান এবং প্রচণ্ড বমি ভাব হয়, ঘাম হয় বা জ্বর ভাব হয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান।

৬. নাক দিয়ে রক্ত পড়লে :

নাক দিয়ে রক্ত পড়লে সামনের দিকে সামান্য ঝুঁকে বসুন। বাঁ হাতের বুড়ো আঙুল ও অনামিকা দিয়ে নাকের দুই ছিদ্র শক্ত করে বন্ধ করুন। এভাবে টানা ১০ মিনিট বন্ধ রাখতে হবে। ভাবছেন শ্বাস নেবেন কীভাবে? কেন মুখ দিয়ে শ্বাস নেবেন!
খেয়াল রাখবেন
টানা ১০ মিনিট ধরে রাখুন, তার পর দেখুন রক্ত পড়া বন্ধ হয়েছে কি না। বারবার নাক ছেড়ে সেটা দেখতে যাবেন না।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন :
যদি একটানা ১০ মিনিট নাসারন্ধ্র চেপে ধরে রাখার পরও রক্ত পড়া বন্ধ না হয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান।

৭. মৌমাছি কামড় দিলে :

ক্ষতস্থানটি সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ব্যথা স্থানে বরফ দিন এবং জ্বালাপোড়া কমায় এমন মলম লাগাতে পারেন।
খেয়াল রাখুন
এক জায়গায় বেশি কামড় দিয়েছে কি না, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন :
যদি শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হয়, জিহ্বা বা গলা ফুলে ওঠে, তবে চিকিৎসকের কাছে যান।
     

৮..ডুবে গেলে করণীয় :



পানিতে ডোবা প্রতিরোধে সাঁতার শিখুন।
প্রায়ই পত্রিকার পাতায় খবর আসে, পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু। খুবই মর্মান্তিক একটি বিষয় এটি। ২০১৩ সালে সারা বিশ্বে প্রায় চার লাখ লোক মারা গেছে পানিতে ডুবে। এর মধ্যে ৮২ হাজারই পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু। ৯৬ শতাংশ পানিতে ডুবে মৃত্যু হয় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের দেশগুলোতে। বাংলাদেশেও প্রতিবছর পানিতে পড়ে শিশু মারা যায়। বাংলাদেশ স্বাস্থ্য ও ইনজুরি সার্ভের (বিএইচআইএস) মতে, প্রতিবছর প্রায় ১৭ হাজার শিশু মারা যায় পানিতে ডুবে, এদের বয়স এক থেকে চার বছরের মধ্যে। অর্থাৎ প্রতিদিন প্রায় ৪৬ শিশু মারা যায়।
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। আইসিডিডিআরবির গবেষণামতে, দেশে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার পুকুর রয়েছে, খাল আছে চার হাজার, নদী-নালা বাদেই। তাদের মতে, বেশির ভাগ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে পুকুর ও খালে; এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে; এক থেকে দুই বছরের শিশুদের মধ্যে; সকাল ৯টা ও দুপুরে, বিশেষ করে মা যখন কাজে ব্যস্ত থাকেন।
কেউ পানিতে ডুবে গেলে আতঙ্কিত না হয়ে প্রথমে তাকে তুলে নিয়ে আসুন। ডুবন্ত কাউকে সাহায্য করতে গেলে সাবধান। কারণ, ডুবন্ত ব্যক্তি উদ্ধারকারীকে সজোরে জড়িয়ে ধরে, ফলে দেখা দিতে পারে বিপত্তি। এ জন্য ডুবন্ত ব্যক্তিকে পেছন থেকে হাতসহ জড়িয়ে ধরে পানি থেকে তুলতে পারেন। পানির ওপরে তোলার পর উপুড় করে দেখতে হবে শ্বাস-প্রশ্বাস আছে কি না। ডুবন্ত ব্যক্তির নাম ধরে ডাক দিয়েও দেখা যেতে পারে তিনি সাড়া দেন কি না। যদি শ্বাস-প্রশ্বাস না থাকে বা শ্বাস নিতে কষ্টকর হয়, তাহলে দেখতে হবে শ্বাসনালির কোথাও কিছু আটকে আছে কি না। এ জন্য আঙুল দিয়ে মুখের মধ্যে কাদা-মাটি থাকলে বের করে দিতে হবে। তার পরও শ্বাস না নিলে মাথা টানটান করে ধরে মুখ হাঁ করতে হবে। এবার উদ্ধারকারী ব্যক্তিকে পেট ভরে শ্বাস নিতে হবে।
ডুবন্ত ব্যক্তির মুখের সঙ্গে মুখ এমনভাবে লাগাতে হবে যেন কোনো ফাঁকা না থাকে। শিশু কম বয়সী হলে নাক-মুখ একসঙ্গে মুখের মধ্যে পুড়তে হবে আর বেশি বয়সী হলে নাক হাত দিয়ে চেপে ধরে মুখে মুখ লাগাতে হবে। এ অবস্থায় উদ্ধারকারী জোরে শ্বাস নিয়ে ডুবন্ত ব্যক্তির মুখে মুখ দিতে হবে। দেখতে হবে, শ্বাস দেওয়ার ফলে ডুবন্ত ব্যক্তির পেট ফুলে যায় কি না। যদি পেট ফুলে যায়, তাহলে বোঝা যাবে শ্বাস দেওয়া ঠিকমতো হচ্ছে। ডুবন্ত ব্যক্তি নিজে থেকে শ্বাস না নেওয়া পর্যন্ত এমন চলতে থাকবে।
হাত ধরে বা গলার পাশে উঁচু অংশ, যেটাকে আডম অ্যাপেল বলে, তার পাশে হাত দিয়ে দেখতে হবে নাড়ির স্পন্দন আছে কি না। যদি না থাকে, তাহলে বুকে চাপ দিতে হবে। বুকের বাঁ পাশে হাত রেখে জোরে জোরে চাপ দিতে হবে যেন বুক বেশ খানিকটা দেবে যায়। যদি শিশু এক থেকে দুই বছরের হয়, তাহলে শিশুর বুক দুই হাত দিয়ে ধরে বুড়ো আঙুল দিয়ে চাপ দিতে হবে। এভাবে পাঁচবার চাপ দেওয়ার পর আগের মতো শ্বাস দিতে হবে। এভাবে নাড়ির গতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত চালাতে হবে।
এভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা চলার পাশাপাশি দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। শিশু পানিতে থাকার কারণে শরীরের তাপমাত্রা কমে যায়। তাই শরীর গরম রাখার জন্য কাপড়চোপড় দিয়ে ভালো করে ঢেকে রাখতে হবে।
অনেকে পানি থেকে তুলেই পেটে চাপ দিয়ে বা শিশুকে উল্টো করে পেটে চাপ দিয়ে পানি বের করার চেষ্টা করেন। এটা ঠিক নয়। এতে শিশু বমি করে দিতে পারে। পরে তা আবার ফুসফুসে প্রবেশ করে জটিলতা দেখা দিতে পারে।
পানিতে ডোবা প্রতিরোধে সাঁতার শিখুন। ছোট শিশুরা বাথটাবে, পানিভর্তি বালতিতেও ডুবতে পারে। কারণ শুধু নাক-মুখ পানিতে ডুবে গেলে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে শিশু মারা যেতে পারে। তাই সাবধান হতে হবে। বেড়াতে গিয়ে শিশু পুকুর-নদীতে গোসল করতে গিয়ে ডুবতে পারে। তাই শিশুকে একা ছাড়বেন না। নদীপথে যাত্রার সময় লাইফ জ্যাকেট পরিধান করুন। যাদের খিঁচুনি আছে, তারা পুকুরে বা সুইমিংপুলে সাঁতার কাটতে যাবেন না। গ্রামে পুকুর-খালের চারপাশে বেড়া দিয়ে দিন, যেন শিশু পুকুরে যেতে না পারে।
লেখক : মেডিকেল অফিসার, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

post সম্পর্কে মন্তব্য করুণ। এবং শেয়ার করে অন্যকে জানার সুযোগ দিন। চিকিৎসা সম্পর্কে প্রশ্ন থাকলে করতে পারেন। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। 

Specially thanks : Ntv






মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

একজন মধ্যবৃত্ত পরিবারের বাবার গল্প।

Mojar Sms ( মজার এস.এম.এস)

Friends Forever